রবিবার, ৩ জুন, ২০১২

আবার মার্কিন সপ্তম নৌবহর বিতর্ক


মার্কিন রিপোর্টে তারকাচিহ্নিত স্থানগুলো চীনের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত সূত্র: উইকিপিডিয়া
মার্কিন রিপোর্টে তারকাচিহ্নিত স্থানগুলো চীনের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত সূত্র: উইকিপিডিয়া
বাংলাদেশে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের ঘাঁটি স্থাপনের খবরটি টাইমস অব ইন্ডিয়া গ্রুপের টিভি চ্যানেল টাইমস নাউ এমন একটি প্রেক্ষাপটে সম্প্রচার করেছে, যখন দক্ষিণ চীন সমুদ্র এবং ভারত মহাসাগর সন্নিহিত এলাকার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের প্রভাব থেকে নিজেদের বাঁচানোর কথাই বেশি ভাবছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খবরের সত্যতা নাকচ করে দিলেও ওই খবরের মনস্তাত্ত্বিক অভিঘাত মিইয়ে যাবে না। খবরটি অস্বীকৃত হলেও আমরা এই অঞ্চলের সমুদ্রসীমা বৃহৎ শক্তির নতুন লীলাক্ষেত্র হয়ে ওঠার দিকটি বিবেচনায় নিতে পারি। উদীয়মান চীনকে চমকাতে এই অঞ্চলে মার্কিন নৌঘাঁটির প্রসঙ্গ গত প্রায় চার দশক ধরেই আলাপ-আলোচনায় আছে। এও সত্য, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ঢাকা-মার্কিন সামরিক সম্পর্কের দহরম-মহরম বেশি। হিলারির সফরকালে সামরিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ একটি চুক্তি হলো এবং এর কয়েক দিন বাদেই মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের কাছে সি-১৩০ বিক্রয়ের প্রস্তাব তুলল মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। শেখ হাসিনা তাঁর আগের জমানায় মার্কিন জঙ্গিবিমান কিনতে গিয়ে বিফল হন।
সপ্তম নৌবহর নিয়ে গত ২৯ মে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্রকে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রথম প্রশ্ন করা হয়। জানতে চাওয়া হয় যে, হিলারির ঢাকা সফরকালে সপ্তম নৌবহরের নতুন ঠিকানা কোথায় হবে তা আলোচনায় এসেছিল কি না। উত্তরে বলা হয়, ‘এই বিষয়টি পেন্টাগনের। তবে আমি বিশ্বাস করি না যে এ নিয়ে হিলারি আলোচনা করেছিলেন।’ টাইমস-এর দাবি, ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তর ‘অফ দ্য রেকর্ড’ এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। অথচ ঢাকা নাকচ করল, নীরব রইল ওয়াশিংটন।
খবরটি আরব সাগরের তীরবর্তী মুম্বাইভিত্তিক টিভি চ্যানেলে যখন প্রচার হচ্ছিল, তখন এশীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা সিঙ্গাপুরে জড়ো হন। সবারই একটা ধারণা ছিল, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টা কি বলতে পারেন। মিয়ানমারের হাওয়া বদলের সঙ্গে মার্কিন ঘোষণার একটা যোগসূত্র কোথাও থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত মিয়ানমারের মন জোগানোর একটা প্রতিযোগিতায় মশগুল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মিয়ানমার সফর করে সেই বার্তাই পৌঁছে দিলেন। তাঁর সফরের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বেইজিংয়ের সঙ্গে ইয়াঙ্গুনের দীর্ঘ ঐতিহ্যগত শক্তিশালী সম্পর্কের ওপর একটা ছায়া সৃষ্টি করা। 
গত শনিবার এশিয়া সফররত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টা সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তাবিষয়ক সাংরি-লা সংলাপে বলেছেন, ‘বাজেট সংকট সত্ত্বেও পেন্টাগন এশিয়ায় মার্কিন উপস্থিতি বৃদ্ধির নতুন কৌশল বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। ২০২০ সালের মধ্যে মার্কিন নৌবাহিনীর প্রায় ৬০ ভাগ রণতরি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন করা হবে।’ এই সিদ্ধান্তে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা তেমন টের পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তবে এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মার্কিন সামরিক উপস্থিতি চীনা নেতাদের শিরঃপীড়ার যে কারণ হবেই, তাতে আর সন্দেহ কী।
মার্কিনদের বর্ণিত চীনা ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ কাহিনি আপনাদের শোনাব। তবে প্রসঙ্গক্রমে সন্তুষ্টিচিত্তে বলি, ভারত মহাসাগরে রণকৌশলগত সমীকরণ পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রবিষয়ক বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটাতে সফল হয়েছে আমাদের সরকার। আমরা ইটলসে মিয়ানমারের সঙ্গে যেভাবে সমস্যার সুরাহা করেছি, সেটাই করতে ইটলসে যেতে ফিলিপাইনকে সাফ না করে দিল বেইজিং। একজন প্রবীণ বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো আন্তর্জাতিক ফোরাম চূড়ান্ত অর্থে শতভাগ আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচমুক্ত নয়। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রণতরিভিত্তিক রণনীতির বাতাবরণে বাংলাদেশের সমুদ্র জয়কে তিনি মূল্যায়ন করতে চান।
সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর নজর যে প্রখর থেকে প্রখতর হতে থাকবে, সেই তরঙ্গ ইতিমধ্যে আমাদের উপকূলে আছড়ে পড়ছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক একজন অস্ট্রেলীয় বিশেষজ্ঞ ইটলসের রায়ে একজন চীনা বিচারকের অবস্থানকে দক্ষিণ চীন সমুদ্রে চীনের সরকারি অবস্থানের মিল খুঁজে পেয়েছেন। চীনা বিচারক গাও বাংলাদেশের সপক্ষে অবস্থান নেন। তিনি এমন রীতিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ-সংশ্লিষ্ট আইনি প্রশ্নের ফয়সালা চান, তাতে সব বিচারক একমত হলে চীনের লাভ হতো। চীনের সঙ্গে দক্ষিণ চীন সমুদ্রের অনেক দ্বীপ নিয়ে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রবিরোধ চলছে এবং চীন বিচারক গাও বর্নিত রীতিতেই বিরোধ মেটাতে চাইছে।
চীনের সঙ্গে এই বিরোধে জড়িয়ে আছে তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই ও সিঙ্গাপুরও। কিছুদিন আগেই সমুদ্রে চীনের বৈরিতায় ক্ষুব্ধ জাপানের পাশে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরে মার্কিন সামরিক বাহিনী এশিয়ার ২৪টি দেশে ১৭২টি নৌ-সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিরক্ষা পরামর্শক সংস্থা বুজ অ্যালেন প্রথমবারের মতো ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ শব্দটি ব্যবহার করেন। দক্ষিণ চীন সমুদ্র থেকে ভারত মহাসাগর—চীনারা এর সন্নিহিত দেশগুলোর বন্দর ও সমুদ্রকেন্দ্রিক বাণিজ্য বাগে রাখতে চায়। ২০০৫ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট-এর একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর এশিয়ার দেশগুলোতে সাড়া পড়ে। ভারত নতুন করে চীনের প্রতি সন্দিগ্ধ হয়। ওই প্রতিবেদনটি একটি গোপন সামরিক দলিল ছিল। বুজ অ্যালেন একটি মানচিত্রও প্রকাশ করেছিলেন। এতে বঙ্গোপসাগরঘেঁষা মিয়ানমারের কোকো দ্বীপ, চট্টগ্রাম, শ্রীলঙ্কার হামবানতোতা, মিয়ানমারের সিটিউ ও পাকিস্তানের গদরে চীন ঘাঁটি বা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়।
স্ট্রিং অব পার্লসকে যুক্ত করেছে একটি রেখা, এর নামকরণ করা হয়েছে সি লাইনস অব কমিউনিকেশন বা স্লক। এটি ইরান-সন্নিহিত হরমুজ প্রণালি থেকে মালাক্কা প্রণালি হয়ে দক্ষিণ চীন সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। মার্কিন দাবি এই এলাকায় জ্বালানি সংগ্রহই চীনের লক্ষ্য। এই বিষয়ে ২০০৬ সালের জুলাইয়ে পেন্টাগনে কর্মরত মার্কিন বিমানবাহিনীর লে. কর্নেল ক্রিস্টোফার জে. পার্সন তাঁর এক গবেষণাপত্রে চট্টগ্রামে একটি কনটেইনার পোর্টকে চীনের ‘পার্ল’ বা মুক্তা হিসেবে চিহ্নিত করেন। ২০১১ সালের এপ্রিলে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি থেকে প্রকাশিত সমীক্ষায় ক্রিস্টিনা লিন একই চিত্র আঁকেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র দপ্তরে চীন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত মিজ লিন চট্টগ্রামের পাশাপাশি ইরাবতী পরিবহন করিডরকেও ‘পার্ল’ হিসেবে দেখান। এই করিডর মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে চীনের ইউনান প্রদেশকে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 
চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন এবং মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে যুক্তরাষ্ট্র তীক্ষ্ন নজরদারিতে রেখেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, বাণিজ্যের জন্য ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যে ধরনের চুক্তি হয়েছে, ঠিক একই ধরনের চুক্তির আওতায় তাঁর সরকার চীনকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে আগ্রহী।
ঢাকা-বেইজিং শক্তিশালী সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়ে স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে উদ্বেগজনক মনে করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনা সম্পৃক্ততা কেবলই অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে বলার পরও তাদের দ্বিধা কাটে না। বাংলাদেশকে প্রয়োজনে পুনঃপুন বলতে হবে, চীন ও ভারতের মধ্যে একটি সেতু হয়েই থাকতে চায় বাংলাদেশ। এবং সে কখনোই সামরিক কাজে এই বন্দর ব্যবহার করতে দেবে না।
৩০ বছরের কূটনীতি পেশায় থাকা একজন রাষ্ট্রদূত যিনি ওয়াশিংটনেও দুই বছর ছিলেন, তিনি বললেন, সরকারি পর্যায়ের কোনো আলাপ-আলোচনায় মার্কিন বা চীনের ঘাঁটির কথা কখনো ওঠেনি।
ড. সি ক্রিস্টাইন ফেয়ার দক্ষিণ এশীয় ভাষা ও সভ্যতার বিষয়ে পিএইচডি করেছেন। তিনি বর্তমানে ওয়াশিংটনে ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের সেন্টার ফর কনফ্লিক্ট এনালাইসিস অ্যান্ড প্রিভেনশনের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী। এই দক্ষিণ এশীয় মার্কিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে ২০০৫ সালে ঢাকায় কথা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আসলে চীনকে ‘কন্টেইন’ বা বাগে রাখা ছাড়া কিছুই নয়—আমার এই মন্তব্যের পিঠে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘ভারত কখনো প্রকাশ্যে বলবে না যে, সে নিজেকে চীনের প্রতিসাম্য হিসেবে দাঁড় করাতে চায়। সেটা ভারতের স্বার্থে যায় না, কারণ সে নিজেও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চাইছে।’ একই কথা বেইজিং-ওয়াশিংটনের ক্ষেত্রেও খাটে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টা চীনকে নতুন করে সে কারণেই আশ্বস্ত করলেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন নৌঘাঁটি স্থাপনের সম্ভাবনা কতটুকু? মিজ ফেয়ার বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি এর উত্তর হলো, না। যদিও আমি এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার কর্তৃপক্ষ নই।’ তবে তিনি সাধারণভাবে বিশ্বব্যাপী মার্কিন ঘাঁটি অব্যাহত রাখার বিষয়ে বলেছিলেন, বিদেশে স্থায়ী ঘাঁটি ও বন্দরনির্ভরতা যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও নৌসেনারা হ্রাস করে চলেছে। এর কারণ হচ্ছে, স্থায়ী ঘাঁটি গড়ার অনেক রাজনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে, এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক ওঠে। এমন অস্থায়ী ঝটিকা ব্যবস্থা রয়েছে যা দিয়ে দরকারে কাজ চালানো যায়।’
১৯৭১ সালে নিক্সন-কিসিঞ্জারের বিতর্কিত ভূমিকা বিশেষ করে সপ্তম নৌবহরের উপস্থিতি বাংলাদেশের জনগণের স্মৃতিতে আজও এক দুঃস্বপ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ২০০৯ সালে বহুজাতিক নৌ মহড়ায় সিঙ্গাপুর, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত অংশ নিয়েছিল। কিন্তু পরের বছর শুধু ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় মহড়ায় প্রথমবারের মতো অংশ নেয়। ওই তিনটি দেশের অংশ না নেওয়ায় ধারণা হয় যে তারা চীনকে চটাতে চায় না। ওই মহড়ার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল গ্যারি রাফহেট ভারতের ন্যাশনাল মেরিটাইম ফাউন্ডেশনে বলেন, ‘শীর্ষ মার্কিন নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘একবিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত স্ট্র্যাটেজিক অংশীদার হবে। আমি এখানে বলতে চাই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী নির্দিষ্টভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ বন্ধু হিসেবে থাকতে চায়।’ ওই মহড়াতেই কিন্তু মার্কিন সপ্তম নৌবহরের সঙ্গে ভারতের ওয়েস্টার্ন ফ্লিট অংশ নিয়েছিল। সুতরাং ‘সপ্তম নৌবহর’ যথেষ্ট দূরের কোনো বিষয় কি? দিয়াগো গর্সিয়ার মার্কিন ঘাঁটি দিয়ে দরকারি কাজ চলে।
৬ মে ২০১০ নিরাপত্তা বিশ্লেষক বালাজি চন্দ্রমোহন এশীয় টাইমস-এ লিখেছিলেন, ‘ভারতকে কোনো নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারত মহাসাগরে চীনের অনুসৃত “স্ট্রিং অব পার্লস” কৌশল মোকাবিলা করতে চায়। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশীয় ও ভারত মহাসাগর সন্নিহিত মিত্র দেশগুলোকে তাদের বন্দর নির্মাণ ও তহবিলের সহায়তা দিয়ে মন জয় করা।’ বালাজি অবশ্য স্মরণ করিয়ে দেন, ‘এই কৌশলের মূল কথা হচ্ছে, ভারত মহাসাগর ভারতের নয়।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কৃষ্ণার কণ্ঠেও একই সুর: দক্ষিণ চীন সমুদ্র চীনের নয়।
একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি দিল্লি সফরে গেলে একজন ভারতীয় অ্যাডমিরাল তাঁকে বলেন, চট্টগ্রামে চীনের নৌঘাঁটি রয়েছে! তাঁর ভুল ভাঙ্গাতে গেলে তিনি নাকি অবাক হননি। আসলে বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটা সন্দেহ-সংশয় ও কাল্পনিক ভীতি হয়তো কাজ করে যাবে। তাঁরা ভাববেন, বাংলাদেশ বেইজিং কিংবা ওয়াশিংটন কোনো দিকে ঝুঁকে পড়ল না তো। 
টাইমস নাউ টেলিভিশনের প্রতিবেদনটি মনে হচ্ছে ঘুড়ি উড়িয়ে দেওয়ার মতো। ওই প্রতিবেদনে এই সুর স্পষ্ট যে ঘরের কাছে বিদেশি সেনা-উপস্থিতি ভারতের জন্য অশ্বস্তিকর। মার্কিন সেনাদের অবাধে বাংলাদেশ সফরের ছাড়পত্রসংবলিত ‘সোফা’ (স্টেটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট) চুক্তির সময় শেখ হাসিনার আগের সরকার বিভক্ত হয়েছিল। তবে বাংলাদেশকে খেলতে জানতে হবে সব তাস। চীনা, ভারতীয় ও মার্কিন তাস খেলতে গিয়ে তাকে নতুন গণতান্ত্রিক প্রতিবেশী মিয়ানমারের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের বাড়তি মনোযোগ মনে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে আলোচনাকালে একজন সাবেক প্রবীণ ও অভিজ্ঞ কূটনীতিক বলেছেন, ‘বিশ্ব রাজনীতিতে দেখা গেছে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে নলখাগড়ার প্রাণ যায়। আমরা আমাদের সমুদ্রকে কেন পরাশক্তির লড়াইয়ের ক্ষেত্র করার সুযোগ দেব? আজ মার্কিনরা ঘাঁটি গাড়লে কাল অন্য কোনো শক্তিও ভর করতে চাইবে।’ কোনো দিকে অহেতুক ঝুঁকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন